করা একটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে৷ বাবুর এখন মাত্র দুই মাস, এই আমাকেই শুনতে হল তুমি আর আগের মত নেই। মোটা হয়ে যাচ্ছ। অথচ তারা কিন্তু ভাল করেই জানে বাচ্চা হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ মোটা হয়। কমতে চাইলেও সময় লাগে।
আর তারা কি জানে আমার বাচ্চা শুরুর দিকে কতটা স্ট্রাগল করেছে খাবার পেত না বলে। আমি চার/পাঁচটা ঔষধ খেতাম যেন খবার পায়। এখনো খাচ্ছি।
বাচ্চা যখন খাবার না পেয়ে চিৎকারে করে সেটা সহ্য করা কি কঠিন শুধু মা’ই জানে। আমি নিজেকে নিজে বারবার বলি, দরকার পরলে ওর জন্য ১০০ কেজি হবো। পরে না হয় খেটেখুটে, জিমে গিয়ে কিংবা এক্সারসাইজ করে কমিয়ে নেব।
তাছাড়া সি সেকশন হওয়ায় ১ বছরের আগে জিমে যাওয়া শুরুও করতে পারব না। অবশ্য থাইরয়েড সমস্যার কারণেও ফিট থাকা খুব কঠিন হবে।
ছেলে মেয়ে উভয়ের জীবনই চ্যালেঞ্জিং, তবে মেয়েদেরটা একটু যেন বেশিই চ্যালেঞ্জিং। বাস ট্রেনের যেমন স্টপেজ আছে তেমনি জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকেই থামতে হয় আরেকটি গন্তব্যে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু মানুষ সেই থামার সময় দেয় না। দৌড়াও দৌড়াও। না দৌড়াতে পারলে তুমি পিছিয়ে পড়লে৷ কি অদ্ভুত৷
আমার কাছে এত অবাক লাগে কিছু জিনিস, নারীদেরকে মুলা ঝুলিয়ে নিজেদের ভাগ বুঝে নিচ্ছে সমাজ। আর এতে অংশ নেয় নারী পুরুষ নির্বিশেষে।
এখানে কেবল international women’s day এবং HeForShe উদযাপিত হয় এবং বেগুনি, গাঢ় গোলাপী কালো শাড়ি পেচিয়ে কিছু ফুলের তোরা, চকলেট, ব্যাজ উপহারেই খুশি।
এখানে উইমেন ইম্পাওয়ারম্যান্ট মানে নারীর বাইক চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি। এই লাইফস্কিলগুলোকেই নারী জাগরনের প্রতিক বানানো হয়েছে। যেগুলো আমি শৈশবেই শিখে বসে আছি।
সত্যিকারের নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করতে চান? তাহলে দিবসগুলোক শাড়ীকেন্দ্রিক সাজ ও পোশাকি উদযাপন থেকে বের করে এনে আসল সমস্যা নিয়ে কথা বলুন।
ডে কেয়ার থাকা উচিৎ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে। যেখানে বুয়া দিয়ে পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন হবে না। থাকবে চাইল্ড সাইকোলজিস্ট, নার্স, ডাক্তার। এবং শিশু লালনপালনে এক্সপার্টদের দিয়ে চালানো হবে এইসব চাইল্ড কেয়ার।
একবার সরকারী এক বড় কর্মকর্তার ইন্টারভিউ নিতে গেলাম। সেই মহিলা ক্যামেরার সামনে এক কথা বলে, আর ক্যামেরার পেছনে গল্পের ছলে বলে ভিন্ন কথা। সামনে বলে আমার সন্তান হওয়ার পরেও কোন বাঁধা ছিল না, আর পেছনে বলে আমার কন্যা কে নিয়ে যে কি কষ্ট হয়েছে!
এ সমাজ ছেলেদের জন্য তৈরি, আর সেই পথে মেয়েদেরকেও হাঁটতে বাধ্য করে। তাই মেয়েদের ইউনিক ফিচারগুলো বরাবরই ইগনোর্ড। একারনে তারা সেই পথে নিজেদেরকে ফিট করতে পারে না। আর যারা পারে তারা অনেকটাই ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদেরকে নারীত্বের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড় দিয়ে এগুতে হচ্ছে।
আমি নারীর অধিকারে বিশ্বাসী, পাল্লায় নয়।
নারীদের জন্য শহরকে নারীবান্ধব হতে হবে। পরিচ্ছন্ন টয়লেট থাকতে হবে। আমি নিজেই ইউরিন ইনফেকশনের শিকার শুধু প্রস্রাব আটকে রাখার জন্য।
নারীরা মানুষ, তারা টয়লেটে যায়। এ সমাজ নিজের লালসা মেটাতে নারীদের খোলামেলা রাখতে চায় এবং নারীদের বলে এভাবে থাকাটাই বোল্ড, সাহসী। এভাবেই বোকা বানায়। কিন্তু পেছনে তারে ডাকে বেশ্যা বলে।
অথচ দিন শেষে তার মানবিক অধিকারটুকু দিতে চায় না। তাকে সমাজের চাহিদা অনুযায়ী ফিট হয়ে চলতে হবে। এর জন্য তারা বডি শেমিং করতে থাকে ইন্ডিস্ক্রিমিনেটলি।
একটি বাচ্চা হতে মায়ের কি পরিমান কষ্ট হয় সেটা দেখেও অন্তত কিছুটা মায়া হওয়ার কথা। কি আজব! উল্টো শরীর নিয়ে নানান কথা বলে।
পরিচিত এক আপু আছেন। বাবু হওয়ার পরে তার হাজবেন্ড তাকে বলেছিল আমি আর তোমার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি না। তোমার বডি আর আগের মত আকর্ষণীয় নেই। সেই আপু অনেক কষ্ট পেয়ে কাঁদছিলেন।
এইসব কমেন্টই নারীকে ধিরে ধিরে আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে নিয়ে যায়।
এখন আমি বুঝি কেন আমার মিস্টার হাফ বাবু হওয়ার পর সুযোগ পেলেই বারবার বলে তুমি মা হয়ে অনেক সুন্দর হয়ে গেছ।
মায়েরা সুস্থ্য থাকুক।