হাসপাতাল ও আমার মায়ের অসুস্থতা।
আম্মা অসুস্থ প্রায় পঁচিশ দিন ধরে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ছিল।তার হার্ট ফেইলুর হয়েছিল ।আমার আম্মার সাথে আমিও হাসপাতালেই ছিলাম একুশ দিন ধরে । প্রথমে টেম্পরারী পেসমেকার দিয়ে হার্ট সচল করার চেষ্টা করেছে প্রায় সাত দিন ধরে। তারপর এনজিওগ্রাম করে দেখেছে তার হার্ট ব্লক আছে কিনা। তার হার্টে কোন ব্লক ধরা না পরায় অবশেষে পারমানেন্ট পেসমেকার বসানো হয়েছে। সেটাও প্রায় কুড়িদিন শেষ হবে আজ। শবেবরাত শেষ হলো টেরই পেলাম না। লকডাউন শুরু হল আমাদের কোন লকডাউন নেই। আমি আর আমার হ্যাজবেন্ড পালা করে হাসপাতালে থেকছি। আমার ছেলের টুয়েলভ গ্রেডের মক দিল বাসায় একা একা থেকে আমরা কেউ তার সাথে থাকতে পারিনি। করোনা শেষে আমার বোন রাতে এসে থেকছে। মনে একটাই চিন্তা ছিল মা কবে সুস্থ হবে? এটাই বড় কথা। বসে বসে ভেবছি পহেলা বৈশাখের আর রমজানের আগে কি বাসায় ফিরতে পারবো মাকে নিয়ে???
আমি সবসময়ই মায়ের পাশে থাকি। কোন এক অজানা ভাগ্য যেদিন তার হার্ট ফেইলিওর হয় আমি ছিলাম না। তাই ডাক্তাররা যখন প্রশ্ন করে আমার আম্মা কি কি ঔষধ খায় তা কেউই ঠিক মত বলতে পারেনি। কিন্তু আমার প্রশ্ন রোগী যদি অসুস্থ থাকে তার কি কি ঔষধ প্রয়োজন সেটা বের করার দায়িত্ব
কার? রোগীর না ডাক্তারের? আর আমার প্রশ্ন সার্জারীর আগেই তো সব টেষ্ট করে বের করা উচিত।
প্রথমে তাকে টেম্পরারি পেসমেকার বসানো হয় তারপর চেষ্টা করা হয় হার্ট বিট সচল করার। যখন এতেও কাজ হয়না তখন পারমানেন্ট পেসমেকার বসানো হয়। পেসমেকার বসানোর পর তার সার্জারীর জায়গাটা এখনো শুকাচছে না। কারন তার ডায়াবেটিস আছে। তখন তারা খুঁজে বের করে যে আম্মার ইনসুলিন লাগবে। এবং অল্প ডোজ ইনসুলিন দেয়া শুরু করে। আর এন্টিবায়োটিক দুটো করে দেয়া শুরু করে। তারপর যখন দেখে যে কাজ হচ্ছে না তারা আরেকটা এন্টিবায়োটিক শুরু করে এভাবেই একপেরিমেন্ট চলছে। অতঃপর শুরু হল কঠোর লকডাউন তাই আমার ভাইবোনরা ডিসিশন নিলাম ডাক্তারকে বলে বাসায় নিয়ে আসবো। আমাদের সিদ্ধান্ত ডাক্তারকে জানানোর পর সে আরেকজন ডাক্তারের কাছে রেফার করলেন। তারপর আমি আম্মাকে হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে নিউ লাইফ হাসপাতাল ধানমন্ডিতে নিয়ে গেলাম। ওখানে একজন ডাক্তারকে দেখালাম। উনি বললেন, ” আপনার আম্মাকে প্রতিদিন এখানে আনতে হবে না আমার লোক আপনার বাসায় গিয়ে ড্রেসিং করে আসবে। “এখন প্রতি দুইদিন পর পর আম্মার ড্রেসিং করে দিয়ে যাচছে একজন এসিস্টেন্ট। এখন আম্মা একটু ভাল আছে। কিন্ত সেই হার্ট ফেইলিওর হওয়ার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আম্মা ভুলতে পারছে না।সারাদিন সে ভালই থাকে রাতে সবাই আমরা যখন ঘুমে তার তখন ঘুম আসে না। অস্হিরতা, কেমন যেন ভয় পায় মনে হয়। অথচ একমাস আগেও সে ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ।আমার ছয়ভাইবোন সবাই দেশের বাইরে থাকে আম্মার এই অসুস্থ অবস্থায় তারা আসতে পারছে না কারন তাদের দেশ থেকে আসতে দিচ্ছে না ।আমার বোন অনেকবার চেষ্টা করেও আসতে পারেনি।
এই সবকিছু দেখে আমরা বুঝতে পারি একজন সুস্থ মানুষের অসুস্থ হতে এক দিন ও সময় লাগে না। একজন সুস্থ মানুষের মৃত্যু স্বাদ নিতে এক ঘন্টা সময়ই যথেষ্ট ।এই করোনা আমাদের আরো কতকিছু দেখালো আর শেখালো। টাকা পয়সার থাকলেও একজন রুগীকে বাঁচানো যায় না। প্রচন্ড ক্ষমতা দিয়ে ও আই সিউতে একটা বেড ব্যবস্থা করা যায় না। টাকা থাকলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইর পাঠানো যায় না। তবুও আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ এখনো কত ধরনের পাপকাজ করে যাচ্ছে । কেউ টাকার জন্য এই রমজানে খাদ্য দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে । কিছু কিনতে গিয়ে দেখবেন দোকানী বেশী লাভের আশায় ওজনে কম দিচ্ছে অথবা পচা একটা জিনিস দিয়ে দিচ্ছে ।কেউ হয়তো খাবার রান্না ভাল হয়নি বলে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া ঝাটি করছে। কেউ বা বিয়ের করার কথা বলায় তার প্রেমিকাকে হত্যা করছে। কেউ আবার নিজের চাকরীটা ঠিক রাখতে অন্যর চাকরীটা চলে যাক সেই ছক কষছে । এই আমাদের মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ । আসুন আমরা মনেপ্রাণে ধর্ম চর্চা করি। আসুন আমরা নিজেদের ভাল কাজের সাথে সম্পৃক্ত করি খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখি আর সবাই ভালো থাকি।
আমি অনেকদিনপর একটা পেন স্কেচ করলাম । প্রায় এক মাসের ও বেশি হবে ছবি আঁকতে পারছিলাম না তাই মনটা খারাপ ছিল ।