Personal Feeling Through Painting

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর স্বপ্ননীলা বুঝতে পারলো আসলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পড়ার মেধা তার নেই

তাই উচ্চ মাধ্যমিকে রেজাল্ট ভালো হয়নি ।চারুকলা অথবা সাহিত্যের কোন সাবজেক্ট তার জন্য ভাল হবে। তাই চারুকলায় ভর্তির পর তার রেজাল্ট খুব ভাল হতে থাকলো কারন এই বিষয়ে তার ছিল অসম্ভব আগ্রহ । যত ধরনের চারুকলার বই সে খুজে পেতো সব পড়তো । তাই যখন কোন বিষয়ে লিখতে শুরু করতো ক্লাসে তার চেয়ে ভাল লেখা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না । এরকম হবার কারন তার ছিল বই পড়ার প্রতি অগাধ ভালবাসা। রেজাল্ট ভালো হওয়াতে তার ছেলে বন্ধুরা কেউ কেউ বলতে লাগল” আ রে থিওরিতে ভাল করা একদম সোজা ।” আর সে মনে মনে কষ্ট পেতো আর ভাবতো সত্যিই তাই । আসলে নারী তুমি কোন কিছুতে ভাল করছ এটা সবার ভাল লাগবে না । এটা বাঙালি জাতির সংস্কৃতি হয়ে গেছে । অন্যের ভাল কেউ দেখতে পারে না, আর নারীর এগিয়ে যাওয়া তো নয়ই ।

স্বপ্ন নীলা ছবি আঁকতে ভালোবাসে । রং ছাড়া তার জীবন ছন্দহীন ,আনন্দহীন । অনেক কষ্টে সংসারের সব কাজ শেষে যে অল্প সময় নিজের জন্য পায় সে সময়টুকুতে লুকিয়ে লুকিয়ে ছবি আঁকা শুরু করে সে । এই সমাজে কোন নারী যদি নিজেকে ভালো রাখার জন্য কিছু করতে চায় সেটা অত্যন্ত দোষের কাজ। যখন তুমি ছবি আঁকতে বসেছ দেখবে পরিবারের লোকজনের হাজারটা ফরমাইশ । এটা লাগবে ,ওটা দাও। কখন তুমি রং আর রেখায় তোমাকে হারাবে নারী ? তুমি তো শৃংখলে বন্দী ।যেখানে তুমি কিছু করতে চাইবে সেখানেই তোমাকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। স্বপ্নার স্বামী তার ছেলেকে বলতে লাগল, “তোমার মা কি সব করে? ,এগুলো দিতে কি হবে?এগুলো সব অকাজ ।” নারীর জন্য আসল কাজ পরিবারের রান্নাবান্নায় মনোযোগী হওয়া । বাকি সব অকাজ । নারী মানে পরিবারের সবাইকে খুশি করতে দিনরাত পরিশ্রম করবে সেটাই এই সমাজে সবার চাওয়া । তোমার জন্য কিছু করবে তা হবে কেন? কেউ কেউ এর ব্যতিক্রম হয়তো আছে যারা সবাইকে কথার যাদুতে মোহিত করে নিজের কাজটাই আদায় করে নেয় । যারা ঘরে সব ঠিক রেখে বাইরে তার আবেশ ছড়িয়ে দিতে পারে। তারা সংসারে স্বামীকে কথায় ভুলিয়ে বাইরে হাজার পুরুষকে বশ করে কাজ করিয়ে নিতে পারে তাদের কথা এখানে হচ্ছে না । কথা হচ্ছে সকল সাধারন নারীদের নিয়ে । স্বপ্ন নীলা তেমন টা পারে না ।

স্বপ্ন নীলা যখন ছবি আঁকা শুরু করলো তখন একটা গ্রুপের সাথে প্রথম কাজ শুরু করলো। সে সবাই বলতে লাগল সে ভালো মেয়ে না তাই ওই গ্রুপে মিশছে আর কাজ করছে। কারণ ওই গ্রুপের প্রধান একজন পুরুষ । সত্যি লজ্জিত হয়ে যেতো সে । তাই চেষ্টা করে কোন নারীর সাথে কাজ করার। কারন “মেয়েটির চরিত্র ভালো নয় ” এটি এমন একটি কথা তার জন্য কোনো প্রমাণের দরকার নেই । কেউ এসে যাচাই করে দেখবে না সে ভাল কী মন্দ। চরিত্র একটি মূল্যবান জিনিস । পুরুষের জন্য আগলে রাখার প্রয়োজন না হলেও নারীর জন্য প্রয়োজন। তাই সে ওই গ্রুপে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ।এখন সে দেখে সবাই ওই গ্রুপে কাজ করে যাচ্ছে । তারমানে মেয়ে তুমি কেন এত এগিয়ে যাবে ? হবে না । তোমার পিছনে মিথ্যা অপবাদ অপপ্রচার চালানো হবে। মেয়ে যাতে তুমি থেমে যাও। অথবা তোমাকে পা টেনে নামানোর চেষ্টা করবে এই সমাজের কিছু লোক ।

ছবি আঁকা তার লেখালেখি এদুটোই করছে স্বপ্ননীলা। তার ছবি বিক্রি হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি । এসব দেখে সে দারুণ উৎসাহে আরো ছবি আঁকা শুরু করে। ইতিমধ্যে দেশে ও বিদেশে কিছুটা নাম ও করেছে সে। বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয় আর কিছু পুরস্কার ও পায় সে। যদিও সে কাজ করে নিজের ভালোলাগার জন্য ,অন্য কিছু তার মনে নেই শুধু ছবি আঁকাতেই তার আনন্দ । বিভিন্ন পুরস্কার আর অনেকেই তাকে বলতে থাকে” আ…..রে টাকা দিয়ে অমন পুরস্কার অনেক কেনা যায় ।” অথচ সে জানে, টাকা দিবে কোথা থেকে তার নিজের ছবি আঁকার সরঞ্জাম কেনার পয়সাটুকু জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে সে । কারণ এই ছবি আঁকার জন্যই তাকে অনেক পারিবারিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ।

স্বপ্ননীলা খুব ফুলের ছবি আঁকতে ভালবাসে । আর বৃষ্টি তার খুবই পছন্দের বিষয়। গাছের পাতায় গায়ে যখন বৃষ্টির পানির ফোঁটা জমে থাকে ,তা দেখতে অসাধারণ লাগে তার। যে ছবিটা তার মনের মধ্যে ভাললাগা তৈরী করে সেই ছবি সে আঁকে । বৃষ্টি বিষন্নতার প্রতিচ্ছবি । তাই নিজের কষ্টগুলো ছবির মধ্যে ঢেলে দিতে চায় সে। বৃষ্টির পানি যখন নদীর স্বচছ জলে পড়ে ছলকে উঠে, সেখানে সৃষ্টি হয় অসংখ্য জলের বিন্দু যা দেখতে অনেকটা হীরক খন্ডের মত মনে হয়। তার কাছে হীরের চেয়ে ও দামী। সব ছবিতে এই ছোট ছোট জলের বিন্দুগুলোকে রঙে রাঙিয়ে দিতে চেয়েছে ইচছা মত। কেউ কেউ বলতে লাগল” আ….. রে শুধু ফুলের ছবি আঁকো ।“এবার অন্য কিছু কর । এর মানে হচ্ছে আপনার ভাল লাগার টুঁটি চেপে ধরতে চায় সবাই । আপনাকে পিছিয়ে নিতে চায় আপনার লক্ষ্য থেকে ।

ছবি আঁকা আর লেখালেখি ছাড়া সে আরেকটি পেশার সাথে জড়িত সেটা হল। শিক্ষকতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল তার হলো না । কিন্তু স্কুলের শিক্ষকতা করে সে। ছাত্র পড়ানো তার খুব পছন্দের বিষয় কারন পড়াতে গিয়ে নিজেকে পড়তে হয়। এই পড়াশোনা তার খুবই আনন্দের বিষয়। স্কুলে কাজের জন্য তার সুনাম আছে । স্কুলের প্রিন্সিপাল তাকে খুব পছন্দ করে আর সেই বিষয়টা অনেকেরই অপছন্দের। প্রিন্সিপাল স্যার তাকে দিয়ে একাডেমিক সব কার্যক্রম করানো শুরু করে । সবাই ভাবে একাডেমিক কো অর্ডিনেটর পোস্ট টা স্বপ্ননীলা পেয়ে যাবে । তাতেই শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। পিছনে লেগে যায় কিছু শিক্ষক। তাদের সেই ষড়যন্ত্র, পুরোনো খামে নতুন চিঠি। প্রিন্সিপালের সাথে স্বপ্নার সম্পর্ক আছে। মেয়ে মানুষের চরিত্রের সাথে খারাপ কিছু জুড়ে দিলে এ সমাজের লোকজন খুব খুশি । এর জন্য প্রমাণের কোন দরকার নেই । লোকমুখে ঘুরবে হাওয়ার মতো । চাকরিটা ছেড়ে চলে আসে সে । কারণ সংসারটা বাঁচাতে চায় সে। এবার চাকরি নেয় একটা স্কুলে যেখানে প্রিন্সিপাল একজন নারী ।

আপনার নিজের বিবেকের কথা শুনুন । আপনার যা করতে ইচ্ছা হবে সেটা করুন ।এই সমাজের মানুষেরা আপনার ভাল কখনো চাইবে না । তাই কাজ করুন কারো কথায় কি এসে যায় । কোন কাজে একাগ্রতা আর নিষ্ঠায় থাকলে সফলতা আসবেই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

About Author

Donation

Support Our Cause

HerWILL is a nonprofit organization. Your support enables us to accomplish our ambitious goals.

Related Posts

Recent Posts