কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্যা বালানের একটা পোস্ট সবার অনেকবার শেয়ারিং এ চোখে পরেছিল। সারাদিন কাজের পর ঘুমোতে যাবার আগে প্রচন্ড ক্লান্তিতে সেই পোস্ট পড়ে নিজের মনের কষ্ট বেড়ে গেল প্রচন্ড। আসলেই তো! এতো কষ্ট করে কাজ না করে, বসে বসে খাওয়া গেলে, শাড়ি–চুড়ি পরে ঘুরে বেড়াতে পারলেই তো জীবন শান্তির হতো। বেশি কাজ করলে নিজের শরীর শক্ত হয়ে ব্যাটা ব্যাটা ভাব আসবে… ব্লা ব্লা অনেক কথাই সেই প্রচন্ড ক্লান্তিতে মনে কী সব আফসোস ছড়াচ্ছিল।
কর্মজীবী নারী হিসেবে যেহেতু রোজই অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। এরই মাঝে কী যেন মনে করে কয়দিন পর পোস্টটা আবারো পড়লাম। এবং দুঃখিত! সেদিন ক্লান্ত হয়ে পোস্টটি পড়ে যে আফসোস কুড়িয়েছিলাম তার সবটাই মস্ত বড় ভুল ছিল। “মেয়ে কেমন হবে সেটা মেয়েকে দুঃখিত! একটা মানুষ কেমন হবে সেটা তাকেই ঠিক করতে দেন।প্যারামিটার সেট করার আপনি আমি কেউ না।“
–আমার মত এইটুকুই।
মা জাতি কোমলমতি নরম সরম ভীতু যদি হয় তাহলে তো ভয়ে সন্তান জন্ম দিতেই অস্বীকার করবে। ১০মাসের কষ্ট, প্রসব বেদনা কোমলমতি, ন্যাকামি পারদর্শী মেয়ে কি নিতে চাইবে?
আর ফিট হওয়ার কি দরকার যদি বলেন তাহলে মনে হচ্ছে বেশি খাইয়ে এইক্ষেত্রে বউকে/পার্টনারকে কোলেস্টেরলে মারার প্ল্যান আছে। ফিট আছে বলে এক রিকশায় পাশে মায়াবতী নিয়ে ঘুরতে পারেন ভাই। আনফিট হলে দুইজন দুই রিকশা জোড়া দিয়ে ঘুরতেন।
উনি যা বলেছেন তাতে কষ্ট করার কোনো দরকার নাই। হাড্ডি মাংস শক্ত করার দরকার নাই। তাহলে লেবার পেইনে একসাথে কতগুলো যেন হাড় ভেঙে যাওয়ার কষ্ট হয় সেটা সহ্য করারও তো দরকার নাই। মেয়ে সারাদিন কাজল দিলে, খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ঘরে ফিরে সাম্প্রতিক বিশ্ব নিয়ে আলাপ করবেন কার সাথে? মেয়ে যদি এইসব নিয়েই ব্যস্ত থাকে তাহলে তো আপনার বাচ্চাকাচ্চাকে পড়াশোনা করানোর দায়িত্ব সবটাই পার্টনারের উপর ন্যস্ত হয়।
মায়াবতী এলোমেলো বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়ালে দেখতে ভালোই লাগবে। কিন্তু তাহলে তার পার্টনার বা পরিবারকে দলিল দস্তাবেজে সই করে দিতে হবে টাকা কামাই করবেন আপনি, বাচ্চাকে পড়াশোনা করাবেন আপনি, আপনি চির অমর হবেন, আপনার পরিবার কোনো আর্থিক সংকটে পরবে না।
মেয়ে মানুষ বা আপনার পার্টনার এমন হওয়া মানে টাকা কামাই করার দায়িত্ব পুরোটাই নিজের কাঁধে নিয়ে নেওয়া। এইটা কত বড় চাপ সেটা যদি সে নিজে না বোঝে তাহলে তো বিপদ। আর ছেলের কথামতো মেয়ে যদি এমন হয় তাহলে হুট করে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি বিছানায় পরে যায় তাহলে সেই পরিবারের কি হবে? সে পরিবারের একমাত্র পুরুষ ব্যক্তি যদি উপার্জনে অক্ষম হয় সেই পরিবার চলবে কী করে?
যাহোক শাড়ি–চুড়ি পরা মেয়ে বা সাধারন মেয়ে সকলেই মায়াবতী হয়, অবশ্যই হয়। কিন্তু মায়ার খেলায় বাস্তবতা চলে না। উনি শুধু খাওয়া দাওয়া আর কাজল কেন্দ্রিক মায়াবতীর স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছেন। জীবনে এই জিনিসগুলো ছাড়া তবে কী মায়াবতী হবার পথ বন্ধ? একজন সফল নারী হিসেবে তিনি যে পথ পাড়ি দিয়েছেন, যেভাবে পড়াশোনা করেছেন, নিজেকে গড়তে সময় দিয়েছেন, এখনো দিচ্ছেন ও কর্মজীবন পার করছেন সেসব কী তার মায়াবতী হবার পথে কাজ করেনি? নিঃসন্দেহে তার গড়ে উঠা ও সফলতা তার বিশ্বব্যাপী গ্রহনযোগ্যতা তো বটেই মায়াবতী নারী হবার অন্যতম বড় কারন। একজন সাধারন নারী এভাবে বললে আমরা কিন্তু তার কথা এতোবার পড়তাম না, এতোবার শেয়ারও করতাম না।
বেশী বেশী খেয়ে অল্প ভুড়ি কিভাবে হয় ভাই? মেয়ে কি কালাজাদু জানে নাকি? খেয়েই খাবার উড়ে যাবে?
মেদহীন মেয়ে মায়াবতী হয় না।
শাড়ি না পরা মেয়ে মায়াবতী হয় না।